Airplane Jet Engine
জেট ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে এর বেসিক কিছু ধারণা নিয়ে আজকে আলোচনা করবো।
জেট ইঞ্জিন এর বেসিক প্রিন্সিপাল হলো কেমিক্যাল এনার্জিকে ফিজিক্যাল থ্রাস্ট পরিণত করা। থ্রাস্ট হলো ধাক্কা দেয় এমন একটা শক্তি। থ্রাস্ট নিউটন এর তৃতীয় সূত্র মেনে চলে। নিউটন এর তৃতীয় সূত্রটি হলো - প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই থিওরীকে কাজে লাগিয়েই জেট ইঞ্জিন কাজ করে। এই থ্রাস্টকে ব্যবহার করেই রকেটও মহাকাশে যায়। জেট ইঞ্জিন সামনে থেকে বাতাসকে শুষে নেয় এবং এই বাতাসকে অনেক জোরে মানে অনেক উচ্চ চাপে পেছন থেকে বের করে। যার ফলে প্রচন্ড পরিমাণ এর থ্রাস্ট অর্থাৎ ধাক্কা দেওয়ার শক্তি তৈরি হয় যা প্লেনটাকে আকাশে উড়তে সাহায্য করে।
![]() |
| Airplane JET ENGINE |
AirbusA380 তে সুপারজাম্বো জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই জেট ইঞ্জিন এ প্রায় 20000 এর মতো কম্পোনেন্ট আছে। তবে প্রধানত জেট ইঞ্জিনকে 4 টি পার্ট এ ভাগ করা হয়। প্রথমে থাকে ইনটেক ফ্যান তারপর থাকে Compressor (সংকোচকারী) তারপর থাকে Combustion chamber (দহনকক্ষ) এরপর থাকে Exhaust (নিষ্কাশন)। ইনটেক ফ্যান এর কাজ হলো বাইরের বাতাসকে ইঞ্জিন এর ভিতরে প্রবেশ করানো। ইনটেক ফ্যান মাধ্যমে 10% - 15% বাতাস ইঞ্জিন এর ভিতরে প্রবেশ করে। তখন Compressor এই বাতাসকে সংকোচিত করে কোনো একটা দিকে পাঠায়। এই Compressor অনেকগুলো wheel (চাকা) দিয়ে তৈরি কিন্তু প্রত্যেকটা চাকা ঘুরে না। প্রত্যেক দুটো চাকার মাজখানে একটা স্টেটর থাকে। এই স্টেটর স্থির থাকে। মডার্ন জেট ইঞ্জিনগুলো 1:40 থেকে 1:50 অনুপাতে বাতাসকে ইঞ্জিন এ প্রবেশ করাতে পারে। সাধারণত বায়ুমণ্ডলের পেসার থাকে 14.7 PSI যা জেট ইঞ্জিন এর Compressor 44 গুন থেকে 50 গুন পর্যন্ত বাতাসকে সংকোচিত করতে পারে। এরপর Combustion chamber এ ফুয়েল ইনজেক্ট হয়। Combustion chamber এ ফুয়েল ইনজেক্ট হওয়ার পর বাতাস এর সাথে মিশে বার্ন করা হয়। তখন ঐ জায়গার তাপমাত্রা থাকে প্রায় 2500°C। সংকোচিত বাতাস এর 50% থেকে 70% ফুয়েল এর সাথে মিশে আগুন জ্বলে বাকি 50% থেকে 30% বায়ু আগুন এর উপর দিয়ে যায়। কারণ 2500°C এ কোনো মেটাল ই সলিড থাকতে পারবে না। তাই ইঞ্জিনিয়াররা reverse flow সিস্টেম ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে Combustion chamber এর মেটাল গলে যাওয়ার থেকে বেঁচে যায়। ইনটেক ফ্যান এর 85% থেকে 90% বাতাস Combustion chamber এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় যা মেটালকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। Compressor পরিমাণ মতো বাতাস Combustion chamber এ পাঠায় যাতে ফুয়েল পুরোপুরি ভাবে জ্বলতে পারে এবং এর থেকে যতটা শক্তি বের করা সম্ভব তা যেনো বের করা যায়। Combustion chamber ফুয়েল জ্বালানোর পর বাতাস অনেক গরম হয়ে যায়। যার ফলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড সহ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস উৎপন্ন হয়। যেহেতু সামনে থেকে বাতাস ইনটেক হচ্ছে তাই এই উত্তপ্ত হওয়া গ্যাসগুলো পিছন দিক দিয়ে অনেক জোরে exhaust হিসেবে বের হয়। তবে Combustion chamber ফুয়েল জ্বালানোর পর যখন উত্তপ্ত বাতাস exhaust হয় ওই exhaust এর জায়গায় টার্বাইন লাগানো থাকে যা উত্তপ্ত বাতাস এর পেসারের জন্য ঘুরতে থাকে। এই টার্বাইন এর সাথে ইনটেক ফ্যান সংযুক্ত থাকে। এখন প্রশ্ন হলো যদি ইনটেক ফ্যান বাইরের বাতাসকে Compressor এ সংকোচিত করে Combustion chamber এ ফুয়েল জ্বালিয়ে exhaust করে এবং Combustion chamber এ থাকা টার্বাইন ইনটেক ফ্যানটাকে ঘুরায়। তাহলে কোনো না কোনো একটা পার্টকে আগে কাজ করতে হবে নাহলে তো জেট ইঞ্জিন চালু হবে না। ইনটেক ফ্যান এবং Compressor কাজ করার জন্য অনেক বেশি পরিমাণ এর শক্তি দরকার যা ব্যাটারি দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। এরোপ্লেন এ ব্যাটারি থাকে কিন্তু সেটা দিয়ে এরোপ্লেন এর পিছনে থাকা ছোট্ট জেট ইঞ্জিনটাকে চালানো হয়। এরোপ্লেন এর ছোট্ট জেট ইঞ্জিনটাকে Auxiliary power unit (APU) বলা হয়। এই APU দিয়েই মেইন জেট ইঞ্জিনগুলোকে চালু করা হয়। ভূমিতে থাকা অবস্থায় এই APU অল্প সময়ের জন্য চালু থাকে। মেইন জেট ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর ছোট্ট জেট ইঞ্জিনটাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরোপ্লেন এ ফুয়েল হিসেবে কেরোসিন এর QVA-1 যা সাধারণ কেরোসিন এর থেকে অনেক বেশি পরিশোধিত এবং কিছু কেমিক্যাল মেশানো থাকে। যা অনেক উঁচুতে ফুয়েলকে জমতে বাধা দেয়। এরোপ্লেন এর জেট ইঞ্জিন এর ইনটেক ফ্যান উড়ন্ত অবস্থায় 3000 RPM এ ঘুরে এবং বড় জেট ইঞ্জিনগুলো 10000-25000 RPM এ ঘুরতে পারে।
![]() |
| JET ENGINE |
RAM-Jet এবং SCRAM-Jet এর ইঞ্জিন মিসাইল মানে ক্ষেপণাস্ত্র তে ব্যবহার করা হয়। এই জেট ইঞ্জিনগুলো একটা গতিতে যেয়ে চালু হয়। এরজন্য এই জেট ইঞ্জিন এর মিসাইলগুলোতে সলিড বোস্টার লাগানো থাকে যা ওই মিসাইলটাকে একটা স্পীড পর্যন্ত নিয়ে যায় এরপর এই জেট ইঞ্জিন চালু হয়। RAM-Jet এর সর্বোচ্চ গতি Mach 3 (3700 km/h) থেকে Mach 6 (7400 km/h) পর্যন্ত হতে পারে। তবে SCRAM-Jet এর সর্বোচ্চ গতি Mach 5 (5000 km/h এর চেয়ে বেশি)। এই SCRAM-Jet শব্দের গতির থেকে 5 গুন বেশি গতিতে যেতে পারে।RAM-Jet থেকে SCRAM-Jet এর গতি অনেক বেশি। এখনও অনেক দেশ এই SCRAM-Jet এর ইঞ্জিন নিয়ে ডেভেলপিং করছে।
এরোপ্লেন এর জেট ইঞ্জিন বানানো অনেক কঠিন। অনেক ক্যালকুলেশন এর মাধ্যমে এরোপ্লেন এর জেট ইঞ্জিন তৈরি করা হয়। মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এই জেট ইঞ্জিন বানাতে পারে। যেমন জেট ইঞ্জিন এর Compressor অনেক ক্যালকুলেশন করে তৈরি করে। Compressor এ অনেকগুলো চাকা থাকে এবং এই চাকার চারপাশে ব্লেড লাগানো থাকে যা বাতাসকে সংকোচিত করে। যত বেশি ব্লেড বসানো যাবে তত বেশি বাতাসকে সংকোচিত করা যাবে। তবে যত বেশি ব্লেড লাগানো হবে বাতাস এর ড্রেগ তত বেশি বেড়ে যাবে আর প্লেনকে আকাশে উড়তে অনেক সমস্যায় সম্মুখীন হতে হবে। তাই অনেক ক্যালকুলেশন করে ব্লেড বসানো হয় যাতে পরিমাণ মতো বাতাসকে সংকোচিত করতে পারে এবং বাতাস এর ড্রেগও যাতে কম হয়। এরপর Combustion chamber এ ফুয়েল যখন বার্ন হয় তখন ঐ জায়গার তাপমাত্রা 2500°C পর্যন্ত হতে পারে। এই তাপমাত্রায় মেটাল সলিড থাকতে পারেনা। তাই reverse flow এর মাধ্যমে বার্ন হওয়া আগুনটাকে মেটাল এর সাথে টাচ লাগতে দেয় না। আবার Compressor থেকে আসা বাতাস অনেক ক্যালকুলেশন করে Combustion chamber এ পাঠাতে হয়। কারণ Combustion chamber এ পরিমাণ মতো বাতাস না পেলে ফুয়েল থেকে সম্পূর্ণ শক্তি বের করা যাবে না এবং অতিরিক্ত বাতাস এ আগুন নিভে যেতে পারে। তাই Compressor থেকে পরিমাণ মতো বাতাস Combustion chamber এ অনেক ক্যালকুলেশন করে পাঠাতে হয়। অনেকে মনেকরে থাকেন জেট ইঞ্জিনের টার্বাইন এর ব্লেড যে মেটাল দিয়ে তৈরি করা হয় ঐটা মানুষের দ্বারা তৈরি করা High tach বস্তু। কারণ 2500°C এ বার্ন হওয়া বাতাস সুপারসনিক গতিতে ওই দিক দিয়ে বের হচ্ছে। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে এই টার্বাইন এ কতটা অ্যাডভান্স মেটাল ব্যবহার করা হয়েছে। মডার্ন জেট ইঞ্জিন এ Nickel-based superalloy ব্যবহার করা হয়। আর জেট ইঞ্জিন এর কোম্পানি টার্বাইন তৈরির মেথডটা অনেক সিক্রেট রাখে। তাই এই জেট ইঞ্জিন তৈরির টেকনোলজিতে অনেক অ্যাডভান্স হতে হবে তাহলে জেট ইঞ্জিন বানানো যাবে।



No comments