১৯৯০ সালের মধ্যে বর্তি সময়ে একটি আবিষ্কার হয় যা পুরো পৃথিবীকে একটি মুঠোয় নিয়ে আসে তা হলো ইন্টারনেট। আজ পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৪.৭২ বিলিয়ন মানুষের কাছে ইন্টারনেটের ব্যাবহার। ইন্টারনেট গোপনীয়তাকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি তাই আপনারা ইন্টারনেটের যাকিছুই করছেন বা খুঁজছেন তা কোথাও না কোথাও প্রাক অথবা রেকর্ড করা থাকে, তাই কিছু মানুষ এই বিষয় নিয়ে ওই সময় খুব চিন্তিত ছিল তাদের মধ্যে একটি গ্রুপ ইউএসের ফেডারেল গভারমেন্ট যারা খুব সচেতন হয়ে ওঠে এই প্রাইভেসি নিয়ে। তারা কম্পিউটার সাইন্টিস্ট দের নিয়ে একটি টিম তৈরি করে যারা ইউএসএ'র নেভাল ল্যাবরেটরিতে রিসার্চ করে একটি টেকনোলজি আবিষ্কার করল যা "অনিয়ন রাউটিং" নামে পরিচিত এটা ব্যবহার করে তারা ইন্টারনেটের একে অপরের সাথে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে নামবিহীন ব্যক্তির গন্তব্য এবং সোর্স এসব বের করা সম্ভব নয়। এটি মূলত এমন ভাবে কাজ করে ধরে নিন এটি এমন একটি নেটওয়ার্ক যা আসল নেটওয়ার্কে গোপন করছে, যে নেটওয়ার্কটি এই কাজটি করছে তাকে বলা হয় "ওভারলে নেটওয়ার্ক" এই নেটওয়ার্কটি সকল নেটওয়ার্কের থেকে উপরে থাকে অর্থাৎ আপনি ইন্টারনেটে যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন তার সার্ফেস ওয়েব বা সাধারণ ইন্টারনেট এর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ না করে ওভারলে নেটওয়ার্ক এর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে যা আপনার গোপনীয়তাকে সুরক্ষা করে। এই নেটওয়ার্কটি বিভিন্ন ধরনের রয়েছে অনিয়ন রাউটিং টেকনোলজির মাধ্যমে ব্যবহৃত করা নেটওয়ার্কের নাম হল "ডার্কনেট" এটি বিশেষ একটি সফটওয়্যার মাধ্যমে এবং অথোরাইজেশন ছাড়া খোলা সম্ভব ছিলো না এই সুবিধা ইউএস গভারমেন্ট ভোগ করতে শুরু করে, কিন্তু "NRL" যা Naval Research Laboratory এর একজন সদস্য একটি ত্রুটি বের করে তাদের একজন এর বক্তব্য টি হচ্ছে- যদি শুধুমাত্র ইউএস গভারমেন্ট এই নেটওয়ার্কের ব্যবহার করেন তাহলে পৃথিবীর সকল মানুষই বুঝতে পারবে গোপন নেটওয়ার্ক থেকে আশা তথ্যটি ইউএস গভারমেন্ট এর এবং এখানে কোন গোপনীয়তা বজায় থাকছে না তাই গোপনীয়তা বজায় রাখতে পাবলিকলি অ্যাভেলেবল করতে হবে। বিষয়টা আরো সহজ করে বলতে গেলে যদি এ নেটওয়ার্ক টা শুধু ইউএস গভারমেন্ট ব্যবহার করেন তাহলে সেখান থেকে বের হওয়া যেকোনো তথ্য দেখে মানুষ বলতে পারবে এটি ইউএস গভারমেন্ট এর কাজ যেহেতু এই নেটওয়ার্কে গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম তাই এই নেটওয়ার্ক টি যদি সবাই ব্যবহার করে তাহলে তখন যদি ইউএস গভারমেন্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করে তাহলে তখন কেউ বুঝতে পারবে না যে এটা তাদের কাজ এবং এতে করে তাদের গোপনীয়তা বজায় থাকবে। তাই "NRL" কে বলা হয় এইটি নেটওয়ার্কটিকে পাবলিকলি অ্যাভেলেবল করার জন্য, তারপর তারা এটি পাবলিকলি লাইসেন্স করে বিশেষ সফটওয়্যার এর নাম "TOR" রেখে ছেড়ে দেয়। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে "The Onion Router" এই নেটওয়ার্ক কে এক্সেস করতে হলে প্রথমে এটাকে ডাউনলোড করতে হবে। বর্তমানে মিলিয়ন এর থেকেও বেশি মানুষ এই নেটওয়ার্কটি ব্যাবহার করছে কেউ করছে তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য এবং কেউ করছে জঘন্যতম ক্রাইম। এই "TOR" এর মত আরও অনেক নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এই সবগুলো নেটওয়ার্ক মিলিয়ে তৈরি হয়েছে "ডার্ক ওয়েব" এবং এই ডার্ক ওয়েব "ডীপ ওয়েব" এর একটি ছোট অংশ। ডীপ ওয়েব হলো সেই সবকিছু যা ওয়েব এ আছে কিন্তু সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় না, যে সকল জিনিস পাসওয়ার্ড বা পে-ওয়াল দ্বারা সংরক্ষিত থাকে সেগুলো ডীপ ওয়েবের অন্তর্ভুক্ত যেমন অনলাইন ব্যাংকিং, নেটফ্লিক্স, ওয়েব মেইল, ডায়নামিক পেইজ এবং ডেটাবেস।
 |
| Dark web (ডার্ক ওয়েব) |

২০০১ সালেই একটি তথ্য থেকে জানা যায় ডিপ ওয়েব এ সার্ফেস ওয়েব এর থেকে ৫০০ গুন বেশি তথ্য রয়েছে সুতরাং ডীপ ওয়েব এই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর অধিকাংশ তথ্য লুকানো আছে। এখন আমরা জানি, যে সকল সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় তা সার্ফেস ওয়েবের অন্তর্ভুক্ত, ডীপ ওয়েবে সেই সব তথ্য থাকে যা সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় না এবং ডার্ক ওয়েব ডীপ ওয়েবের সেই অংশ যা পাসওয়ার্ড বা অথোরাইজেশন এর মাধ্যমে ব্যাবহার করা সম্ভব যা TOR এর মত বিশেষ সফটওয়্যার দ্বারা সার্ফ করতে পারবেন। ডার্ক ওয়েব সার্ফ করলে আমরা কোন ধরনের তথ্য বা কন্টেন্ট পেতে পারি তা এখন জানবো,TOR এর মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজিং ও করা যায় যাতে আপনি সব করতে পারবেন। কিন্তু যারা ডার্ক ওয়েব সার্ফ করে তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে এটি ব্যাবহার করে তাদের নেটওয়ার্ক গোপন রেখে সার্ফ করা, ডার্ক ওয়েবের সাইটগুলোতে চলে সকল ধরনের অবৈধ এবং খারাপ কাজ TOR এ থাকা সকল হিডেন সাইট গুলো .onion এ প্রকাশ করা হয় যেমনটা গুগল এর ক্ষেত্রে .com এবং আপনি যদি .onion সাইট গুলো গুগল এ সার্চ করেন তা কখনোই পাবেন না, এই হিডেন সাইট গুলো শুধুমাত্র কিছু স্পেশাল সফটওয়্যার এর মাধ্যমে এক্সেস করা যায়। ডার্ক ওয়েবের অন্যতম একটি সাইট হলো "The hidden wiki" এই সাইটে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের গুপ্ত সেবা প্রদান করা হয়, আরেকটি হলো "Duckduckgo" এ সাইট টি মানুষ বেশিরভাগ খারাপ কাজে ব্যাবহার করে এর মাধ্যমে অনেক কিছু হ্যাকা ও করা হয়। ডার্ক ওয়েবের একটি অবৈধ ড্রাগ ব্যাবসার জনপ্রিয় সাইট হলো "Silk Road" ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে এফবিআই নামের ইউএসএর একটি তদন্তকারী সংস্থা এই সাইটটি কে বন্ধ করে কারন ২০১১ সালে এর থেকে আয় করা অর্থের পরিমান ছিলো ১.২ বিলিয়ন ডলার এবং আরও জানা যায় এটি ডার্ক ওয়েবের অন্ধকার জগতের অধিকাংশই কিনে নিয়েছে এতে তারা ড্রাগের অপব্যাবহারকে সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক বলে তুলে ধরে, কিন্তু এইটা বন্ধ করার কিছু মাস পরে "Silk Road 2.0" নামের আরও একটি সাইট তৈরি হয় এবং এটাকেও ২০১৪ সালের শেষের দিকে বন্ধ করা হয় কারন তার এডমিন কে তারা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং তার কিছু সময় পরে আর একটি ওয়েবসাইট "Silk Road 3.0" নামের চালু হয়ে যায়। এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে ডার্ক ওয়েব এ যা ড্রাগ এর অবৈধ ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। ডার্ক ওয়েব এর অন্য একটি সাইট হলো "Hitman Network" এই সাইটে কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করা হয়, এখানে পেমেন্ট করা হয় বিট কয়েন এর মাধ্যমে মে এবং বাজারে বিট কয়েনের মূল্য অনেক এই সাইটে আপনি যাকে ইচ্ছার হত্যা করার কন্ট্রাক্ট দিতে পারবেন তাদের একটি শর্ত আছে ১৬ বছরের নিচের কোনো শিশু এবং পৃথিবীর শীর্ষ ১০ টি পলিটিশিয়ান কে তারা হত্যা করবে না এবং এখানের কোন হত্যাকারীকে প্রমানের অভাবে ধরা যায় না কারন ডার্ক ওয়েব এর মাধ্যমে তারা তাদের সকল তথ্য গোপন রাখতে সক্ষম হয়। ডার্ক ওয়েব এ যে কেউ যে কোনো ধরনের অপরাধ করতে পারে এবং তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে মোটা অংকের অর্থ এবং এখানে ফেইক সাইটে মাধ্যমেও অনেকে অনেকের টাকা মেরে দেয়। ডার্ক ওয়েবের অনেক বড় একটা অংশ হলো নগ্নতা সম্পর্কিত চরম ভয়ংকর জিনিশ এতে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে সেক্সুয়ালি টর্চার, পশু হত্যা এবং চাইল্ডপর্নোগ্রাফি' টাইপের অনেক ধরনের কাজে নিযুক্ত এরকম একটি সাইটের নাম হলো "LOLITA CITY" এই ওয়েবসাইটটিতে ১০০ জিবিরও বেশি ছবি ও ভিডিও রয়েছে যা সব নগ্নতা নিয়ে এর ইউজার ১৪,৯৯৪ (জুন ২০১৩) অনুযায়ী আর একটি ওয়েব সাইট রয়েছে "PLAYPEN" এটি ডার্ক ওয়েবের সব থেকে বড় ওয়েবসাইট চাইল্ড পর্নোগ্রাফি নিয়ে এবং ২,১৫,০০০ ইউজার রোজ এই সাইট ভিজিট করতো যা ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে বন্ধ করা হয় তখন এই ডিটেইলস জানা গিয়েছিল। এদের অন্যতম একটি সাইট হলো "RED ROOMS" এটি একটি ছোট্ট ঘর যেখানে মানুষকে নিশংস ভাবে টর্চার করে হত্যা করা হয় বেশিরভাগ সময় ছোট বাচ্চাদের এর শিকার বানানো হয় তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অমানবিক অত্যাচার করা হয় যেমন আঙুল কেটে নেয়া, চোখ খুবলে নেয়া ইত্যাদি এবং এখানে দর্শকদের নির্দেশনা অনুযায়ীও বাচ্চাদের টর্চার করা হয় এবং শেষে মেরে ফেলা হয়, এখানে যারা টর্চার করে তারা মূলত "ISIS" সংগঠন এর হয়ে থাকে বাচ্চাদের "RED ROOMS" এ আনার পর প্রথমে এক ঘন্টা বন্ধুসুলভ আচরণ করা হয় তারপর থেকে শুরু হয় তাদের অমানবিক অত্যাচার এবং অত্যাচার শেষে তারা তাদের দর্শকদের এক প্লেট মাংস দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। ২০১৬ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় ডার্ক ওয়েবে থাকা মোট এক্টিভ .onion সাইটের সংখ্যা ২,৭২৩ টি এবং ১,৫৪৭ টি অবৈধ কন্টেন্ট রয়েছে যার মধ্যে অর্ধেকই হলো পর্ন রিলেটেড চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, রেপ ভিডিও ও সেক্সুয়ালি টর্চার এ ধরনের ওয়েবসাইট এবং বাকি গুলো অবৈধ ড্রাগ ব্যাবসা, ককন্ট্রাক্ট কিলার, সাইবার টেরোরিজম, ব্ল্যাক মানি এবং অবৈধ ভাবে অস্ত্র পাচার এর মত মারাত্মক কাজ। সব থেকে বড় বিষয় হল সমগ্র "TOR" ব্যাবহারকারী দের মধ্যে শুধুমাত্র ৩/৬% মানুষই এই গুপ্ত পরিসেবা গুলো ব্যাবহার করে এবং বাকিরা ব্যাবহার করে তাদের প্রাইভেসি সুরক্ষিত রাখার জন্যে।
২০০৭ সালে "TOR" প্রজেক্টের ১০০% টাকা এসেছিল ইউএস গভারমেন্ট থেকে, ও ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ সালে এই অর্থের পরিমান এসেছিল ৮৬%, ৯০%, ৯৪% এবং ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সালে ৭৮%, ৮১%, ৯৪% অর্থ প্রদান করেছিল। বর্তমানে বিশ্বের অনেক শতাংশ মানুষ এই ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে থাকে।
No comments