সুইস ব্যাংক

সুইস ব্যাংক

বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের অর্থ বা সম্পদ জমানোর জনপ্রিয় একটি গন্তব্য হলো সুইস ব্যাংক। সুইস ব্যাংক বলতে কোনো একটি ব্যাংকে বোঝায় না, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং নীতিমালার অধীনে প্রায় ২৫০ টি ব্যাংক ও আর্থিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত ভাবে সুইস ব্যাংক নামে পরিচিত। পৃথিবীর যে কোনো দেশের ধনী ব্যাক্তি তাদের যে কোনো ধরনের অর্থ এই সুইস ব্যাংকে রাখতে পারে। প্রায় ৩০০ বছরের বেশি ধরে এই সুইস ব্যাংক গোপনীয়তার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।


সুইস ব্যাংক


সুইজারল্যান্ড এর সকল ব্যাংক পরিচালনা করে সুইস ফেডারেল ব্যাংকিং কমিশন। সুইস ব্যাংক এর একাউন্ট অন্যান্য ব্যাংকের মতোই সাধারণ ভাবে কাজ করে, কিন্তু তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাদের ব্যাংকে মূলধনের সর্বনিম্ন ঝুঁকি এবং গ্রাহকের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা। ১৯৩৪ সালের সুইস আইন অনুযায়ী সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর তাদের আমানতকারীর তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করে। তারা গ্রাহকদের তথ্য গোপন রাখতে বাধ্য এবং এ ব্যাপারে তারা কাউকে কোন তথ্য জানায় না, কোনভাবে যদি ব্যাংক কোন গ্রহকে তথ্য গোপন রাখতে সক্ষম না হয় তাহলে সেই গ্রাহক ব্যাংকের নামে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। গোপনীয়তা ভঙ্গের জন্য কোন সুইস ব্যাংকারের সর্বোচ্চ 6 মাসের জেল এবং ৪৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। তাদের গোপনীয়তার জন্য বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের অর্থের গন্তব্য হয়েছে এই সুইস ব্যাংক। সুইস ব্যাংকে আরো বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যার ফলে সব শীর্ষ ধনীরা তাদের অর্থ-সম্পদ এখানে রাখেন। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক এটি পৃথিবীর অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রা ১ সুইস ফ্রাংক এর মূল্য বাংলাদেশি ৯১ টাকার মতো, সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার মুদ্রাস্ফীতি নেই বললেই চলে। দিন দিন তাদের মুদ্রার মান বেড়েই চলেছে, বিগত শতকের তিরিশের দশকের ঘটা মহা মন্দার ফলে সারাবিশ্বের মত সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতিও ২০% হ্রাস পায় এর পর থেকে তারা তাদের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা সর্বোচ্চ স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম। তাছাড়া সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকারাও দক্ষ, তারা জানে ব্যাংকের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ পরিমাণে মুনাফা লাভ করা যায়। বেশিরভাগ দেশে মানুষ বেশি সুদের আশায় ব্যাংকে টাকা জমা রাখে কিন্তু সুইস ব্যাংকের সুদের হার মাত্র ০.৭৫%, এ ব্যাংকে সুদের হার শুধু কম ই নয় অনেক সময় মাইনাস এও থাকে অর্থাৎ আপনাকে ব্যাংকে অর্থ রাখার জন্য সুদ দিতে হবে। সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলাটাও সহজ নয়, এ ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য নূন্যতম ১ লক্ষ ইউএস ডলার জমা রাখতে হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮৫ লক্ষ টাকা এবং বাৎসরিক চার্য হিসেবে ২৬ হাজার টাকা কাটা হয়। একজন আমানতকারীর সকল সম্পদ এবং তার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর একাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়া হয়।তবে সত্যিকার অর্থে ট্যাক্স ফাকি দেয়া ব্যাবসায়ী, দূর্নীতি রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং অসাধু লোকেরা তাদের সম্পদের পাহাড় গড়েছে সুইস ব্যাংকে। বিদেশী অপরাধীদের শনাক্ত করতে কিছু ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংক তাদের গোপনীয়তা শিথিল করে, যেমন কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ট্যাক্স ফাকি দূর্নীতি সংক্রান্ত মামলা থাকলে ব্যাংকগুলো তাদের তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। বিভিন্ন দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ বিচারে ভারত ৭৭ তম, বাংলাদেশ ৮৫ তম এবং পাকিস্তান ৯৯ তম। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে বাংলাদেশিরা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা রেখেছে। স্বল্প উন্নত দেশগুলোর থেকে পাচার হওয়া টাকা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে, বাংলাদেশের কয়েক বছরের জাতীয় বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ শুধুমাত্র সুইস ব্যাংকে পাচার করা হয়েছে।

এই ছিলো সুইস ব্যাংকের সকল ধরনের তথ্য যা, সুইস ব্যাংকে সকল ব্যাংক থেকে আলাদা করে।

2 comments:

  1. এরকম আরও তথ্যের অপেক্ষায় আছি

    ReplyDelete
  2. আজ যদি আমার সুইস ব্যাংক এ একটা একাউন্ট থাকতো����

    ReplyDelete

Mansa Musa

✱ বর্তমান আধুনিক বিশ্বে কোনো ধনোকুপ এর কথা উঠলে সবাই বিল গেটস, জেফ বেজোজ অথবা ইলন মাস্ক এর কথা বলবেন যাদের অর্থের সঠিক কোনো হিসাব নেই। কিন্ত...

Powered by Blogger.