Anonymous Hacktivist (Hacker Group)

Anonymous Hacktivist (Hacker Group) 




আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় সমস্ত কাজই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানকালে ইন্টারনেটের সুবিধা আমাদের সকলের কাছেই সহজলভ্য হওয়ার কারণে ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ইন্টারনেট ছাড়া আমরা একটি গোটা দিন কাটানোর কথাই ভাবতে পারি না। ইন্টারনেট আপনাকে যেমন এক রকম সুবিধা দিয়েছে যে আপনি ঘরে বসেই পৃথিবীর সমস্ত রকমের তথ্য জানতে পারবেন আর ঠিক একই রকমভাবে অপরদিকে ইন্টারনেটে আপনার তথ্য দিয়ে আপনারও ক্ষতিসাধন করা যেতে পারে। ইন্টারনেটে যে সমস্ত ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বেআইনিভাবে আপনার তথ্য চুরি করে তাদেরকে আমরা সাধারণ ভাষায় হ্যাকার বলে থাকি। হ্যাকার অনেক ধরনের হয়ে থাকে। যদিও প্রধানত দুই ধরনের হ্যাকার ইন্টারনেটের জগতে মাতিয়ে রেখেছেন। তারা হল ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস ও হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারস। যেমন একদিকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস জনসাধারণের তথ্য বেআইনিভাবে চুরি করে তাদের বিভিন্ন রকম ক্ষতি সাধন করে থাকে তেমনি অপরদিকে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের থেকে আমাদেরকে প্রটেক্ট করে এবং তারা আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকেই কাজ করে। যদিও ইন্টারনেটে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস অভয়েড হ্যাকারদেরকে ছাড়াও আরো একটি হ্যাকারদের দল রয়েছে যারা বেআইনিভাবে তো কাজ করে ঠিকই কিন্তু মানব সমাজের মঙ্গলের জন্যই কাজ করে থাকে যেহেতু এই হ্যাকারদের দল জনগণের মঙ্গলের কাজ করে থাকে তাই ইন্টারনেটের জগতে এরা হ্যাক্টিভিস্ট নামেও পরিচিত। আজকে আমরা আলোচনা করতে চলেছি ইন্টারনেট জগতের সবচাইতে ভয়ংকর ও রহস্যময় হ্যাকারদের দলের যাদেরকে আমরা সাধারণ ভাষায়  অ্যানোনিমাস  বলে থাকি। এই দল বিভিন্ন ধরনের আতংবাদি কার্যকলাপ ও সরকার জনগণের অমঙ্গল স্বার্থে যে সমস্ত কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের টেকনোলজি পাওয়ারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবাদ করে থাকেন বা সঠিক অর্থে বললে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকেন। কিন্তু এই অ্যানোনিমাস হ্যাকারদের দল এতটাই রহস্যময় যে এদের সম্পর্কে বিন্দুমাত্র তথ্য পর্যন্ত জানে না যে ঠিক কোন কোন ব্যক্তি অ্যানোনিমাস হ্যাকারদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ,  অ্যানোনিমাস হ্যাকার দের দলকে প্রধানত কোন দেশ থেকে পরিচালনা করা হয় এরকম সমস্ত তথ্য কেউই জানেন না। অ্যানোনিমাস নামের অজ্ঞাতপরিচয় এই হ্যাকারদের দলের সঙ্গে মনে করা হয়ে থাকে 12 বছরের কিশোর  কিশোরী থেকে শুরু করে 60 বছর বয়সের বৃদ্ধ ব্যক্তি ও যুক্ত রয়েছে। অ্যানোনিমাস দলের কোন লিডার নেই , এমনকি এদের কোন হেড অফিসও নেই। অ্যানোনিমাস দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো লিখিত নিয়ম নেই। অ্যানোনিমাস হ্যাকিং দলের সদস্য আপনার চেনা পরিচিত যেকোনো ব্যক্তিই হয়ে থাকতে পারেন। যেমন ধরুন আপনার প্রতিবেশী বা আপনার পাশে বসে থাকা আপনার বন্ধু বা বান্ধবী। আপনার বাড়ির লোকও অ্যানোনিমাস দলের সদস্য হয়ে থাকতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি প্রত্যেকদিন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ থেকে দেখতে পান আপনার শিক্ষক আপনি প্রার্থী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে যান সেই চিকিৎসকের কিন্তু অ্যানোনিমাস একদলের সদস্য হওয়া টা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক অজ্ঞাতপরিচয় হ্যাকারদের এই দল বা সংগঠনের শুরুটা হয়েছিল ঠিক কেমন করে। যেমন শুরুর দিকেই বলা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় হ্যাকারদের এই দল সম্পর্কে সঠিক তথ্য তেমনভাবে কারো কাছেই উপলব্ধ নেই। তবুও অনেকেই মনে করে থাকেন অ্যানোনিমাস নামের এই দলের সূচনা হয় 2003 সালে ফরচেন ডট ওআরজি নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে।এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে যে কোন ব্যক্তি নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং সেখানে অন্য ব্যক্তিরা তার মতামতের ওপর উত্তর দেয়। সেখানে এক ব্যক্তি একবার একজন নেতার ফানি ছবি পোস্ট করেছিল। সেখানে নেতা দলের একজন ব্যক্তি সেই পোষ্টটি দেখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে দেয়। সেই পোস্টে আরেকজন অ্যানোনিমাস নামের ব্যক্তি উত্তর দিয়েছিলেন সেখানে , তিনি যে ফানি পোস্ট করেছিলেন তার সঙ্গ নিয়ে বলেছিলেন প্রত্যেকের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে এবং সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও নেতা দলের সেই ব্যক্তি গালিগালাজ করা থেকে বিরত হননি। এই ঘটনা থেকে প্রায় বিরক্ত হয়ে অ্যানোনিমাস নামের সেই ব্যক্তিটি নেতা দলের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে নিজের প্রোফাইল থেকে পোস্ট করে দেন আর সেই সঙ্গে একটি ছোট মেসেজ ছিল। সেটি ছিল কিছুটা এরকম - 


"We Are Anonymous
We Do Not Forgive
We Do not Forget
Expect Us"



এই কথাটি পরবর্তীকালে গিয়ে অ্যানোনিমাস হ্যাকিং দলের সবচাইতে প্রচলিত উক্তিতে পরিণত হয়েছিল আর মনে করা হয় এই ঘটনাটি থেকেই অ্যানোনিমাসের সূচনা হয়েছিল। পরবর্তীকালে অ্যানোনিমাস নামে ইন্টারনেটে হাজার হাজার হ্যাকিং হয়। তাদের নিজেদের অন্যরকম কাজের জন্যই খুব কম সময়ের মধ্যেই সাধারন জনগনের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যখন উইকিলিকস নামের একটি ওয়েবসাইটকে তারা সাপোর্ট করেছিল। এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যেটি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সম্পর্কের সত্যতা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। উইকিলিকসকে পুরোপুরিভাবেই জনসাধারণের ডোনেট করা টাকা দিয়ে চালানো হয়। কিন্তু একসময় একাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা এই ওয়েবসাইটটিকে বন্ধ করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। সেই সমস্ত প্রভাবশালী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতারা ব্যাংকে আদেশ দিয়েছিল যে সমস্ত ব্যক্তিরা উইকিলিকসকে টাকা ডোনেট করতে চায় তাদের টাকাকে যেন কিছু মাসের জন্য আটকে দেয়া হয়। যখন উইকিলিকসে ডোনেশনের টাকা আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল ঠিক সেই সময়ই অ্যানোনিমাস মিটিং এর দল ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করে উইকিলিকস এর ডোনেশন আটকাতে দেয়নি। এর থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় অ্যানোনিমাস কতটা শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান। অ্যানোনিমাস আইএসআই জঙ্গি সংগঠনের একাধিক ওয়েবসাইট হ্যাক করে তাদের তথ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করেছিল।

Anonymous



 অ্যানোনিমাসের এই সমস্ত সাহসী কর্মকাণ্ডের জন্য অ্যানোনিমাসকে  ডিজিটাল রবিনহুড বলা হয়ে থাকে। অ্যানোনিমাস এতটাই ক্ষমতাবান যে অ্যানোনিমাস আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওয়েবসাইট কেউ হ্যাক করেছিলো 2012 সালে।"টাইমস" অ্যানোনিমাস কে পৃথিবীর সবচাইতে প্রভাবশালী 100 জনের মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অ্যানোনিমাস দলের সদস্য হওয়ার সন্দেহে এখনো পর্যন্ত অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যানোনিমাস দল কিন্তু জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য আওয়াজ তুলতে এতটুকুও পিছুপা হয়নি। অ্যানোনিমাসের কিছু সদস্য রিলায়েন্স জিওর বিরুদ্ধে মারাত্মক রকমের অভিযোগ করেছে। এই হ্যাকিং দলের কিছু সদস্য দাবি করেছে রিলায়েন্স জিও গ্রাহকদের কলিং এর বিভিন্ন তথ্য আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে। যদিও এই সমস্ত দাবি এখনো প্রমাণিত হয়নি। সেকারণে এই ব্যাপারে জোর দিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

No comments

Mansa Musa

✱ বর্তমান আধুনিক বিশ্বে কোনো ধনোকুপ এর কথা উঠলে সবাই বিল গেটস, জেফ বেজোজ অথবা ইলন মাস্ক এর কথা বলবেন যাদের অর্থের সঠিক কোনো হিসাব নেই। কিন্ত...

Powered by Blogger.